ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার সমস্যা শহজেই সমাধান
চুল পড়া ছেলেদের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা, যা শারীরিক, মানসিক এবং জীবনধারাগত
কারণে হতে পারে। এই বিস্তারিত গাইডে আমরা চুল পড়ার কারণ, প্রতিরোধের উপায়,
ঘরোয়া চিকিৎসা, পুষ্টি, এবং
চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞানসম্মত সমাধানের মাধ্যমে আপনি কীভাবে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তা জানতে এই পোস্টটি আপনাকে সাহায্য করবে।
পেজ সুচিপত্রঃ
- চুল পড়ার প্রধান কারণগুলো কী কী
- জীবনধারা কীভাবে চুল পড়াকে প্রভাবিত করে?
- পুষ্টির অভাব এবং চুলের স্বাস্থ্য
- ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া কমানোর কৌশল
- তেল এবং প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার
- চিকিৎসা পদ্ধতি: কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
- চুলের যত্নে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারের ভূমিকা
- মানসিক চাপ এবং চুল পড়ার সম্পর্ক
- চুল পড়া রোধে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
- দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য টিপস
- লেখকের কথা
চুল পড়ার প্রধান কারণগুলো কী কী
চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। জেনেটিক ফ্যাক্টর বা
বংশগত কারণ প্রায়শই পুরুষদের মধ্যে চুল পড়ার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এটি পুরুষ প্যাটার্ন টাক (Male Pattern Baldness) নামে পরিচিত, যা হরমোনের
পরিবর্তনের কারণে ঘটে। ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) নামক হরমোন চুলের ফলিকলকে
সংকুচিত করে, যার ফলে চুল পড়ে যায়। এছাড়া, থাইরয়েড সমস্যা, অটোইমিউন রোগ,
এবং ত্বকের সংক্রমণও চুল পড়ার কারণ হতে পারে। কিছু ওষুধ, যেমন কেমোথেরাপি বা
স্টেরয়েড, চুল পড়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। পরিবেশগত কারণ, যেমন দূষণ বা কঠিন
পানির ব্যবহার, চুলের ক্ষতি করে। এই সমস্যাগুলো সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার
মাধ্যমে চুল পড়া কমানো সম্ভব।
অন্যদিকে, জীবনযাত্রার অভ্যাসও চুল পড়ার জন্য দায়ী হতে পারে। অতিরিক্ত
ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, এবং অপুষ্টি চুলের শিকড়কে দুর্বল করে। ঘুমের অভাব এবং
শারীরিক কার্যকলাপের ঘাটতি রক্ত সঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করে, যা চুলের বৃদ্ধিতে
বাধা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, অনুপযুক্ত চুলের যত্ন, যেমন অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে
চুল ধোয়া বা কঠোর রাসায়নিক শ্যাম্পু ব্যবহার, চুল পড়ার কারণ হয়। এই
কারণগুলো জানা থাকলে জীবনযাত্রায় ছোটখাটো পরিবর্তনের মাধ্যমে চুল পড়া
অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে, সমস্যা গুরুতর হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নেওয়া উচিত।
জীবনধারা কীভাবে চুল পড়াকে প্রভাবিত করে?
জীবনধারা চুলের স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। আধুনিক জীবনে ব্যস্ততা,
অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
যারা দীর্ঘ সময় কাজের চাপে থাকেন বা রাত জেগে কাজ করেন, তাদের হরমোনের
ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা চুলের ফলিকলের উপর প্রভাব ফেলে। ধূমপান এবং অ্যালকোহল
সেবন রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমায়, ফলে চুলের শিকড়ে পুষ্টি পৌঁছায় না।
নিয়মিত ব্যায়াম না করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন কমে, যা চুলের বৃদ্ধিকে
বাধাগ্রস্ত করে। এছাড়া, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে,
যা চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
একটি সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন ৭-৮
ঘণ্টা ঘুম, সুষম খাদ্য, এবং নিয়মিত ব্যায়াম চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন মানসিক চাপ কমায়, যা চুল পড়া
নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। পরিষ্কার পরিবেশে থাকা এবং দূষণ থেকে চুলকে রক্ষা করাও
জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, বাইরে যাওয়ার সময় মাথা ঢেকে রাখলে ধুলোবালি থেকে চুল
সুরক্ষিত থাকে। এছাড়া, চুলে অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং বা রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার
এড়িয়ে চলা উচিত। জীবনধারায় এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো চুল পড়া কমাতে এবং
চুলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘমেয়াদে সহায়ক হবে।
পুষ্টির অভাব এবং চুলের স্বাস্থ্য
চুলের স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন, খনিজ পদার্থ,
এবং প্রোটিনের অভাব চুলকে দুর্বল করে এবং পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়। বিশেষ
করে, ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন), ভিটামিন ডি, এবং আয়রনের ঘাটতি চুল পড়ার সাথে
সরাসরি সম্পর্কিত। বায়োটিন চুলের কেরাটিন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা চুলের গঠন
মজবুত করে। আয়রনের অভাবে মাথার ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ কমে, ফলে চুল দুর্বল
হয়। জিঙ্ক এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও চুলের চকচকে ভাব এবং শক্তি বজায় রাখে।
ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর নির্ভরশীলতা এই পুষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি
করে।
পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রতিদিনের খাবারে
ডিম, মাছ, বাদাম, সবুজ শাকসবজি, এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ডিমে প্রচুর
পরিমাণে বায়োটিন এবং প্রোটিন রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। মাছ, বিশেষ
করে স্যামন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে। ভিটামিন ডি-এর জন্য সকালের
রোদে ১৫-২০ মিনিট সময় কাটানো উপকারী। যদি খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ
না হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে,
অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাই সতর্কতা
অবলম্বন করা জরুরি।
ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া কমানোর কৌশল
ঘরোয়া উপায় চুল পড়া কমাতে কার্যকর এবং সাশ্রয়ী। নিয়মিত মাথার ত্বক ম্যাসাজ
করা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী করে। নারিকেল তেল বা
অলিভ অয়েল দিয়ে সপ্তাহে দুইবার ম্যাসাজ করলে চুল পড়া কমে। এছাড়া,
অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকে প্রয়োগ করা ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলের
শিকড় মজবুত করে। মেথি বীজের পেস্ট রাতে ভিজিয়ে সকালে মাথায় লাগালে চুল পড়া
কমে এবং নতুন চুল গজায়। এই উপাদানগুলো সহজলভ্য এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।
আরেকটি জনপ্রিয় ঘরোয়া উপায় হলো পেঁয়াজের রস ব্যবহার। পেঁয়াজে থাকা সালফার
চুলের ফলিকলকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। একটি পেঁয়াজ
ব্লেন্ড করে রস বের করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
এছাড়া, ডিমের কুসুম এবং মধুর মিশ্রণ চুলে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করলে চুল মসৃণ
এবং শক্তিশালী হয়। এই পদ্ধতিগুলো নিয়মিত প্রয়োগ করলে ফলাফল দেখা যায়। তবে,
যেকোনো উপাদান ব্যবহারের আগে ত্বকে অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
তেল এবং প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার
তেল চুলের যত্নে একটি অপরিহার্য উপাদান। নারিকেল তেল চুলের শিকড়ে পুষ্টি
জোগায় এবং মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের ক্ষতি
প্রতিরোধ করে। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার হালকা গরম নারিকেল তেল দিয়ে মাথার ত্বক
ম্যাসাজ করে ১-২ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। একইভাবে, আমন্ড অয়েল ভিটামিন ই
সমৃদ্ধ, যা চুলের চকচকে ভাব বাড়ায়। ক্যাস্টর অয়েল চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত
করে এবং ঘন করে। তবে, তেল ব্যবহারের সময় পরিমিত রাখা জরুরি, কারণ অতিরিক্ত তেল
ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করতে পারে।
প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে হেনা এবং আমলকি চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হেনা
চুলকে শক্তিশালী করে এবং প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। আমলকি পাউডার
ভিটামিন সি-এর উৎস, যা চুল পড়া কমায় এবং চুলের রঙ ধরে রাখে। আমলকি পাউডার
পানির সাথে মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে ৪৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া, দই এবং
লেবুর রসের মিশ্রণ চুলের তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে এবং খুশকি দূর করে। এই
প্রাকৃতিক উপাদানগুলো নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া কমে এবং চুল স্বাস্থ্যকর হয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি: কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
যদি ঘরোয়া পদ্ধতি বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পরেও চুল পড়া না কমে, তবে
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ (Dermatologist) চুল পড়ার
কারণ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা বা স্ক্যাল্প বায়োপসি করতে পারেন।
মিনোক্সিডিল এবং ফিনাস্টেরাইডের মতো ওষুধ চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে
সহায়ক। মিনোক্সিডিল মাথার ত্বকে সরাসরি প্রয়োগ করা হয়, যা চুলের ফলিকলকে
উদ্দীপ্ত করে। ফিনাস্টেরাইড DHT হরমোনের মাত্রা কমায়, যা পুরুষ প্যাটার্ন
টাকের জন্য দায়ী। তবে, এই ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, তাই
ডাক্তারের নির্দেশ মেনে চলা উচিত।
গুরুতর ক্ষেত্রে, চুল প্রতিস্থাপন (Hair Transplant) বা PRP (Platelet-Rich
Plasma) থেরাপি কার্যকর সমাধান হতে পারে। চুল প্রতিস্থাপনে মাথার পেছনের অংশ
থেকে চুলের ফলিকল সামনের অংশে স্থানান্তর করা হয়। PRP থেরাপিতে রোগীর নিজের
রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে মাথার ত্বকে ইনজেকশন দেওয়া হয়, যা চুলের বৃদ্ধি
ত্বরান্বিত করে। এই চিকিৎসাগুলো ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ, তবে দীর্ঘমেয়াদী
ফলাফল দেয়। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে আপনার সমস্যার জন্য সঠিক চিকিৎসা বেছে
নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
চুলের যত্নে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারের ভূমিকা
শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার চুলের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক
শ্যাম্পু নির্বাচন করা চুল পড়া কমাতে সহায়ক। সালফেট-মুক্ত এবং প্রাকৃতিক
উপাদান সমৃদ্ধ শ্যাম্পু চুলের ক্ষতি কমায়। বায়োটিন, ক্যাফিন, বা
নিয়াসিনামাইড সমৃদ্ধ শ্যাম্পু চুলের শিকড় মজবুত করে এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত
করে। সপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত, কারণ অতিরিক্ত ধোয়া চুলের
প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে। শ্যাম্পু করার সময় হালকা গরম বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার
করা ভালো, কারণ গরম পানি চুলকে শুষ্ক করে।
কন্ডিশনার চুলকে মসৃণ এবং হাইড্রেটেড রাখে। প্রোটিন সমৃদ্ধ বা কেরাটিনযুক্ত
কন্ডিশনার চুলের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করে। শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার চুলের
মাঝামাঝি থেকে ডগা পর্যন্ত লাগানো উচিত, শিকড়ে লাগালে ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে।
এছাড়া, সপ্তাহে একবার ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য উন্নত
হয়। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য পাওয়া যায়, তবে আপনার চুলের ধরন
অনুযায়ী পণ্য নির্বাচন করা জরুরি। প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত শ্যাম্পু এবং
কন্ডিশনার দীর্ঘমেয়াদে চুলের জন্য নিরাপদ।
মানসিক চাপ এবং চুল পড়ার সম্পর্ক
মানসিক চাপ চুল পড়ার একটি প্রধান কারণ। দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস কর্টিসল হরমোনের
মাত্রা বাড়ায়, যা চুলের ফলিকলের কার্যক্ষমতা কমায়। এটি টেলোজেন এফ্লুভিয়াম
নামক একটি অবস্থার সৃষ্টি করে, যেখানে চুল অকালে বিশ্রাম পর্যায়ে চলে যায় এবং
পড়ে যায়। কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যা, বা আর্থিক উদ্বেগ মানসিক চাপ বাড়ায়,
যা চুলের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়া, স্ট্রেসের কারণে ঘুমের
অভাব এবং খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম চুল পড়াকে আরও ত্বরান্বিত করে।
মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
কার্যকর। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন মনকে শান্ত রাখে এবং হরমোনের ভারসাম্য
ফিরিয়ে আনে। বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, শখের কাজে মনোযোগ দেওয়া, এবং
পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এছাড়া, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং
নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। যদি মানসিক চাপ
নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাথে পরামর্শ করা
উচিত। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে চুল পড়া অনেকাংশে কমে যায়।
চুল পড়া রোধে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
খাদ্যাভ্যাস চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন চুলের
প্রধান উপাদান কেরাটিন তৈরি করে, তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করা
জরুরি। মুরগি, মাছ, ডিম, এবং ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
সমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, আখরোট, এবং চিয়া সিড, চুলের ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখে।
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ বাদাম এবং বীজ চুলের চকচকে ভাব বাড়ায়। আয়রন সমৃদ্ধ পালং
শাক এবং লাল মাংস চুলের শিকড়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফল এবং শাকসবজি
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা চুলের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
খাদ্যাভ্যাসে কিছু খাবার এড়িয়ে চলাও জরুরি। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং
ফাস্ট ফুড ত্বকের প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা চুল পড়াকে ত্বরান্বিত করে। পর্যাপ্ত
পানি পান করা চুলের হাইড্রেশন বজায় রাখে। প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি পান করা
উচিত। এছাড়া, ক্যাফিন এবং অ্যালকোহলের পরিমাণ কমানো চুলের স্বাস্থ্যের জন্য
উপকারী। নিয়মিত খাবারের সময়সূচী মেনে চলা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে
চললে চুল পড়া কমে। খাদ্যাভ্যাসে এই পরিবর্তনগুলো ধীরে ধীরে ফলাফল দেয়, তাই
ধৈর্য ধরে নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য টিপস
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য নিয়মিত যত্ন এবং ধারাবাহিকতা
প্রয়োজন। প্রতিদিন চুলের যত্নের রুটিন তৈরি করা উচিত, যেখানে পরিষ্কার রাখা,
ময়েশ্চারাইজিং, এবং পুষ্টি সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সপ্তাহে দুইবার তেল
ম্যাসাজ, প্রাকৃতিক মাস্ক ব্যবহার, এবং সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন চুলের স্বাস্থ্য
বজায় রাখে। চুলে অতিরিক্ত রাসায়নিক পণ্য বা হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলা জরুরি।
এছাড়া, নিয়মিত চুল ছাঁটাই করলে চুলের ডগা ফাটা রোধ হয় এবং চুল স্বাস্থ্যকর
থাকে। পরিবেশগত ক্ষতি থেকে চুল রক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার সময় মাথা ঢেকে
রাখুন।
দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলের জন্য জীবনযাত্রায় ভারসাম্য আনা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম,
পর্যাপ্ত ঘুম, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। প্রতিদিন সুষম
খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা চুলের হাইড্রেশন এবং পুষ্টি নিশ্চিত
করে। যদি চুল পড়া অতিরিক্ত হয়, তবে তাড়াতাড়ি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নিন। ধৈর্য এবং নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিজের
প্রতি যত্নশীল হোন এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য সময় বিনিয়োগ করুন, ফলাফল
নিশ্চিতভাবে আসবে।
লেখকের কথা
চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, তবে সঠিক যত্ন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের
মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জেনেটিক কারণ থেকে শুরু করে পুষ্টির অভাব,
মানসিক চাপ, এবং অনুপযুক্ত চুলের যত্ন—বিভিন্ন কারণ চুল পড়ার জন্য দায়ী।
ঘরোয়া উপায়, প্রাকৃতিক উপাদান, এবং চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয়ে চুলের স্বাস্থ্য
ফিরিয়ে আনা যায়। নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং সঠিক পণ্য
ব্যবহার চুল পড়া কমাতে সহায়ক। ধৈর্য এবং ধারাবাহিকতার সাথে এই পরামর্শগুলো
মেনে চললে আপনি সুস্থ, ঘন, এবং চকচকে চুল ফিরে পেতে পারেন। নিজের প্রতি যত্নশীল
হোন এবং আজ থেকেই চুলের যত্ন শুরু করুন।
ইনফো লাগবের নীতিমালা জেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়। ;
comment url