শীতকালে হাত-পায়ের চামড়া ওঠার কারণ ও সমাধান
সূচীপত্রে যা যা থাকছে
- শীতকালে হাত পায়ের চামড়া উঠে যায় কেন
- শীতের আবহাওয়া ত্বকের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে
- ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হ্রাসের বিজ্ঞান
- শীতকালে ত্বকের যত্নে অভ্যন্তরীণ কারণের ভূমিকা
- শুষ্ক ত্বকের সাধারণ লক্ষণ ও সমস্যা
- শীতকালে ত্বকের যত্নের প্রাকৃতিক উপায়
- ত্বকের শুষ্কতা কমাতে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
- শীতকালে ত্বকের যত্নে ক্রিম ও ময়েশ্চারাইজারের ভূমিকা
- শীতকালে ত্বকের যত্নে করণীয় ও বর্জনীয়
- চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন
- লেখক এর মন্তব্য
শীতকালে হাত পায়ের চামড়া উঠে যায় কেন
শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেকেই প্রতি বছর মুখোমুখি হন। এর প্রধান কারণ হলো পরিবেশের আর্দ্রতার মাত্রা কমে যাওয়া। শীতের সময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে, যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল এবং আর্দ্রতা শোষণ করে। ফলে হাত-পায়ের চামড়া শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। এছাড়া, ঘরের ভেতরে হিটার ব্যবহার করা ত্বকের শুষ্কতা আরও বাড়িয়ে দেয়। হিটারের তাপ বাতাসের আর্দ্রতা কমিয়ে ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের স্তর নষ্ট করে। এই পরিস্থিতিতে ত্বকের বাইরের স্তর, যা স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম নামে পরিচিত, তার আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়। ফলে চামড়া উঠে যাওয়া, ফাটল ধরা এবং চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা শুধু অস্বস্তিকর নয়, বরং ত্বকের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই শীতকালে ত্বকের যত্নে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
এছাড়া, শীতকালে গরম পানিতে স্নান করার অভ্যাসও ত্বকের শুষ্কতা বাড়ায়। গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে ফেলে, যা ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে। অনেকে শীতের সময় ঘন ঘন গরম পানিতে হাত-পা ধোয়, যা ত্বকের আর্দ্রতা আরও কমিয়ে দেয়। এই অভ্যাসের ফলে ত্বকের বাধা (skin barrier) দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চামড়া উঠে যাওয়ার সমস্যা তীব্র হয়। এছাড়া, শীতকালে পর্যাপ্ত পানি পান না করাও ত্বকের শুষ্কতার একটি বড় কারণ। শরীরে পানির ঘাটতি হলে ত্বকের কোষগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে ত্বক শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ত্বকের যত্নে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শীতের আবহাওয়া ত্বকের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে
শীতের আবহাওয়া ত্বকের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে, যা শুষ্কতা ও চামড়া উঠে যাওয়ার অন্যতম কারণ। শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এই কম আর্দ্রতা ত্বক থেকে পানি শোষণ করে, ফলে ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। বিশেষ করে হাত ও পা, যেগুলো বেশিরভাগ সময় খোলা থাকে, এই সমস্যার শিকার হয়। শীতের ঠান্ডা বাতাস ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। এই তেলের স্তর নষ্ট হলে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে ত্বক ফাটতে শুরু করে এবং চামড়া উঠে যায়। এছাড়া, শীতের সময় বাইরের ঠান্ডা এবং ঘরের ভেতরের উষ্ণতার পার্থক্য ত্বকের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
ঘরের ভেতরে হিটার বা ফায়ারপ্লেস ব্যবহার করা ত্বকের শুষ্কতা আরও বাড়িয়ে দেয়। এই গরম করার যন্ত্রগুলো বাতাসের আর্দ্রতা কমিয়ে ফেলে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। অনেকে শীতের সময় উলের পোশাক পরেন, যা ত্বকের সঙ্গে ঘষা লেগে শুষ্কতা বাড়াতে পারে। এই ঘষার ফলে ত্বকের উপরের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চুলকানি ও লালভাব দেখা দেয়। এছাড়া, শীতকালে সূর্যের আলোর তীব্রতা কম হলেও, ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে মিলিত হয়ে এটি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। ত্বকের শুষ্কতা এবং চামড়া উঠে যাওয়া থেকে বাঁচতে শীতের আবহাওয়ার এই প্রভাবগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক যত্ন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে এই সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ শীতকালে কাপড় তাড়াতাড়ি শুকায় কেন?
ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হ্রাসের বিজ্ঞান
ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হ্রাস পাওয়ার পেছনে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। ত্বকের বাইরের স্তর, স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম, পানি এবং তেলের একটি ভারসাম্য বজায় রাখে, যা ত্বককে নরম ও সুরক্ষিত রাখে। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় এই স্তর থেকে পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটি ট্রান্সইপিডার্মাল ওয়াটার লস (TEWL) নামে পরিচিত। TEWL বৃদ্ধি পেলে ত্বকের আর্দ্রতা হ্রাস পায় এবং চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়। এছাড়া, ত্বকের সিবাম নামক প্রাকৃতিক তেল শীতকালে কম উৎপন্ন হয়, যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই তেলের অভাবে ত্বকের বাধা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ত্বক সহজেই শুষ্কতার শিকার হয় এবং চামড়া উঠে যায়।
এছাড়া, শীতকালে ত্বকের কোষের পুনর্জনন প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ত্বকের মৃত কোষগুলো স্বাভাবিকভাবে ঝরে পড়ার পরিবর্তে ত্বকের উপর জমা হয়, যা ত্বককে আরও খসখসে করে তোলে। এই মৃত কোষগুলো ত্বকের আর্দ্রতা শোষণ করতে বাধা দেয়। শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় রক্ত সঞ্চালনও কিছুটা কমে যায়, যা ত্বকের পুষ্টি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ত্বক নিষ্প্রাণ এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। এই সব বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া একত্রে ত্বকের শুষ্কতা এবং চামড়া উঠে যাওয়ার সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। তাই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং TEWL কমাতে সঠিক যত্ন নেওয়া অপরিহার্য।
শীতকালে ত্বকের যত্নে অভ্যন্তরীণ কারণের ভূমিকা
শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা শুধু বাহ্যিক কারণেই নয়, অভ্যন্তরীণ কারণেও বাড়তে পারে। শরীরের পানিশূন্যতা ত্বকের শুষ্কতার একটি বড় কারণ। শীতকালে তৃষ্ণা কম লাগায় অনেকে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। ফলে শরীরে পানির ঘাটতি হয়, যা ত্বকের কোষগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ত্বকের কোষগুলো পানি ছাড়া সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। এছাড়া, শীতকালে অনেকে ভারী খাবার খান, যেমন তেল-মশলাযুক্ত খাবার, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পুষ্টির ঘাটতি, বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই এর অভাব, ত্বকের শুষ্কতা বাড়াতে পারে।
এছাড়া, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং স্ট্রেসও ত্বকের শুষ্কতার জন্য দায়ী হতে পারে। শীতকালে অনেকে সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (SAD) নামক মানসিক সমস্যায় ভোগেন, যা স্ট্রেস বাড়ায়। স্ট্রেসের কারণে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ত্বকের তেল উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে চামড়া উঠে যায়। এছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবও ত্বকের পুনর্জনন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। ঘুমের সময় ত্বক নিজেকে মেরামত করে এবং নতুন কোষ তৈরি করে। ঘুমের ঘাটতি হলে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে ত্বক নিষ্প্রাণ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই ত্বকের যত্নে অভ্যন্তরীণ কারণগুলোর দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
শুষ্ক ত্বকের সাধারণ লক্ষণ ও সমস্যা
শীতকালে শুষ্ক ত্বকের সাধারণ লক্ষণগুলো সহজেই চোখে পড়ে। ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, চামড়া উঠে যাওয়া, চুলকানি এবং লালভাব এই সমস্যার প্রধান লক্ষণ। হাত ও পায়ের ত্বক বিশেষ করে শুষ্ক হয়ে ফাটতে শুরু করে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে ত্বকের শুষ্কতা এতটাই তীব্র হয় যে ছোট ছোট ফাটল দেখা দেয়, যা থেকে রক্তপাতও হতে পারে। এই লক্ষণগুলো শুধু শারীরিক অস্বস্তিই নয়, মানসিক চাপও সৃষ্টি করে। ত্বকের শুষ্কতার কারণে অনেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন, বিশেষ করে যখন হাত বা পায়ের ত্বক দৃশ্যমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সমস্যা যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে তা আরও জটিল হতে পারে।
শুষ্ক ত্বকের আরেকটি বড় সমস্যা হলো সংক্রমণের ঝুঁকি। ত্বকের ফাটল বা ক্ষতস্থান দিয়ে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক প্রবেশ করতে পারে, যা ত্বকের সংক্রমণের কারণ হয়। বিশেষ করে শীতকালে ত্বকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া, শুষ্ক ত্বকের কারণে একজিমা বা ডার্মাটাইটিসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই রোগগুলো ত্বকের চুলকানি এবং লালভাব আরও বাড়িয়ে দেয়। শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা এবং সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি। ত্বকের শুষ্কতা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে এই সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
শীতকালে ত্বকের যত্নের প্রাকৃতিক উপায়
শীতকালে ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপায় খুবই কার্যকর। নারিকেল তেল ত্বকের শুষ্কতা কমাতে দারুণ কাজ করে। এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং প্রাকৃতিক তেলের ঘাটতি পূরণ করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে হাত-পায়ে নারিকেল তেল মালিশ করলে ত্বক নরম ও মসৃণ থাকে। এছাড়া, মধু ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং চামড়া উঠে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করে। মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এক চামচ মধুর সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বকের শুষ্কতা কমে। এলোভেরা জেলও ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি ত্বককে ঠান্ডা করে এবং আর্দ্রতা সরবরাহ করে।
অন্যদিকে, ঘরোয়া স্ক্রাব ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। ওটমিল এবং দুধের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি স্ক্রাব ত্বকের খসখসে ভাব কমায় এবং নরম করে। এছাড়া, অলিভ অয়েল ত্বকের শুষ্কতা কমাতে দারুণ কাজ করে। এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ফাটা ত্বক মেরামত করে। প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ব্যবহার করা নিরাপদ এবং ত্বকের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে দূরে রাখে। তবে, এই উপাদানগুলো ব্যবহারের আগে ত্বকের ছোট একটি অংশে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিলে শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা এবং চামড়া উঠে যাওয়ার সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
ত্বকের শুষ্কতা কমাতে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
ত্বকের শুষ্কতা কমাতে খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাছ, আখরোট এবং ফ্ল্যাক্সসিড, ত্বকের শুষ্কতা কমাতে দারুণ কাজ করে। এই খাবারগুলো ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন বাড়ায় এবং ত্বককে নরম রাখে। ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন বাদাম, কমলালেবু এবং সবুজ শাকসবজি, ত্বকের কোষ মেরামত করে এবং শুষ্কতা কমায়। এই পুষ্টি উপাদানগুলো ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
অন্যদিকে, অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার এবং ক্যাফেইন ত্বকের শুষ্কতা বাড়াতে পারে। ক্যাফেইন শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, যা ত্বকের আর্দ্রতা কমায়। তাই কফি বা চা বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া, প্রচুর পরিমাণে ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়া ত্বকের পুষ্টি সরবরাহ করে। বিশেষ করে তরমুজ, শসা এবং ডাবের পানি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। খাদ্যাভ্যাসে ভারসাম্য রক্ষা করা ত্বকের শুষ্কতা এবং চামড়া উঠে যাওয়ার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। সঠিক খাবারের মাধ্যমে ত্বকের ভেতর থেকে যত্ন নিলে শীতকালেও ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল থাকে।
শীতকালে ত্বকের যত্নে ক্রিম ও ময়েশ্চারাইজারের ভূমিকা
শীতকালে ত্বকের যত্নে ক্রিম এবং ময়েশ্চারাইজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শুষ্কতা রোধ করে। শীতের সময় এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত যাতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন বা সিরামাইড থাকে। এই উপাদানগুলো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা সরবরাহ করে এবং ত্বকের বাধা মজবুত করে। স্নানের পরপরই ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত, কারণ তখন ত্বকের ছিদ্র খোলা থাকে এবং ময়েশ্চারাইজার ভালোভাবে শোষিত হয়। হাত ও পায়ের জন্য ঘন ক্রিম ব্যবহার করা ভালো, কারণ এই অংশগুলো বেশি শুষ্ক হয়। পেট্রোলিয়াম জেলি বা শিয়া বাটারযুক্ত ক্রিম ফাটা ত্বক মেরামত করতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, অ্যালকোহলযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি ত্বকের শুষ্কতা বাড়াতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে ময়েশ্চারাইজার লাগালে ত্বক সারা রাত হাইড্রেটেড থাকে। এছাড়া, সানস্ক্রিনযুক্ত ময়েশ্চারাইজার দিনের বেলা ব্যবহার করা উচিত, কারণ শীতকালেও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করা জরুরি। শুষ্ক ত্বকের জন্য তেল-ভিত্তিক ক্রিম এবং স্বাভাবিক ত্বকের জন্য পানি-ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার উপযুক্ত। ময়েশ্চারাইজার নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা এবং চামড়া উঠে যাওয়ার সমস্যা অনেকাংশে কমে।
শীতকালে ত্বকের যত্নে করণীয় ও বর্জনীয়
শীতকালে ত্বকের যত্নে কিছু করণীয় এবং বর্জনীয় মেনে চললে ত্বক সুস্থ থাকে। প্রথমত, নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। স্নানের পরপরই ময়েশ্চারাইজার লাগালে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়। এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং হাইড্রেটিং খাবার খাওয়া ত্বকের শুষ্কতা কমায়। হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা বজায় রাখা উচিত। হাত ও পায়ে নিয়মিত তেল মালিশ করলে ত্বক নরম থাকে। এছাড়া, শীতকালে মৃদু সাবান বা ক্লিনজার ব্যবহার করা উচিত, যাতে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট না হয়। ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান, যেমন মধু বা এলোভেরা, ব্যবহার করা নিরাপদ এবং কার্যকর।
অন্যদিকে, গরম পানিতে বেশিক্ষণ স্নান করা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি ত্বকের আর্দ্রতা কমায়। অতিরিক্ত স্ক্রাবিং বা রুক্ষ তোয়ালে দিয়ে ত্বক ঘষা ত্বকের ক্ষতি করে। উলের পোশাক সরাসরি ত্বকের সঙ্গে লাগলে শুষ্কতা বাড়তে পারে, তাই তুলার পোশাক ব্যবহার করা ভালো। অ্যালকোহলযুক্ত প্রসাধনী এবং কঠিন সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া, শীতকালে অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল পান করা ত্বকের শুষ্কতা বাড়ায়। এই করণীয় এবং বর্জনীয় মেনে চললে ত্বকের শুষ্কতা এবং চামড়া উঠে যাওয়ার সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন
শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা যদি তীব্র হয় এবং ঘরোয়া চিকিৎসায় কাজ না করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ত্বকে লালভাব, তীব্র চুলকানি বা ফাটল থেকে রক্তপাত হলে তা সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের সমস্যায় ত্বক বিশেষজ্ঞ (dermatologist) সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন। এছাড়া, যদি ত্বকের শুষ্কতার সঙ্গে একজিমা, সোরিয়াসিস বা অন্য কোনো ত্বকের রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। চিকিৎসক ত্বকের ধরন এবং সমস্যার তীব্রতা অনুযায়ী স্টেরয়ড ক্রিম বা অন্য ওষুধ সুপারিশ করতে পারেন। ত্বকের সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিমের প্রয়োজন হতে পারে।
অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের শুষ্কতা থাইরয়েড সমস্যা বা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মূল কারণ নির্ণয় করা জরুরি। ত্বকের যত্নে সঠিক পণ্য নির্বাচনের জন্যও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে ভুল পণ্য ব্যবহার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে ত্বকের শুষ্কতা এবং চামড়া উঠে যাওয়ার সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তাই ত্বকের সমস্যা তীব্র হলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
উপসংহার
শীতকালে হাত-পায়ের চামড়া উঠে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, তবে সঠিক যত্ন এবং সচেতনতার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শীতের আবহাওয়া, অভ্যন্তরীণ কারণ এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হ্রাসের ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে চামড়া উঠে যায়। ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপায়, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, করণীয় ও বর্জনীয় মেনে চলা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে ত্বকের যত্নে নিয়মিত মনোযোগ দিলে ত্বক সুস্থ, নরম এবং উজ্জ্বল থাকে। তাই প্রতিদিনের রুটিনে ত্বকের যত্নকে অগ্রাধিকার দিয়ে শীতকালেও ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখা সম্ভব।
ইনফো লাগবের নীতিমালা জেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়। ;
comment url