স্মার্ট ফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত


স্মার্ট ফোন কেনার সময় বাজেট, প্রসেসরের গতি, ক্যামেরার গুণগত মান, ব্যাটারি লাইফ এবং ডিসপ্লে কোয়ালিটি বিবেচনা করা উচিত। স্টোরেজ, র‍্যাম এবং অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ব্র্যান্ডের নির্ভরযোগ্যতা
স্মার্ট-ফোন-কেনার-সময়-যে-বিষয়গুলো-বিবেচনা-করা-উচিত
 ও বিক্রয়োত্তর সেবাও গুরুত্বপূর্ণ। ৫জি সংযোগ, ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি আপনার চাহিদার সাথে মিলিয়ে দেখুন। ফোনের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য সফটওয়্যার আপডেট নীতি পরীক্ষা করুন।

সূচীপত্র 

 স্মার্ট ফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত 

 স্মার্ট ফোন কেনার সময় প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বাজেট নির্ধারণ করা। বাজেট ঠিক না করলে আপনি সহজেই বিভ্রান্ত হতে পারেন কারণ বাজারে বিভিন্ন দামের ফোন পাওয়া যায়। ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকার বেশি দামের ফোনও রয়েছে। তাই আপনার আর্থিক সামর্থ্য এবং ফোনের জন্য কতটুকু বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক তা আগে থেকে ঠিক করা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি শুধুমাত্র দৈনন্দিন কাজ যেমন কল, মেসেজিং, এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের জন্য ফোন কিনতে চান, তাহলে মধ্যম বা লো-বাজেটের ফোনই যথেষ্ট। কিন্তু গেমিং বা ফটোগ্রাফির জন্য হাই-এন্ড ফোন প্রয়োজন হতে পারে। বাজেট ঠিক করার সময় ফোনের সাথে অতিরিক্ত খরচ যেমন কেস, স্ক্রিন প্রোটেক্টর বা হেডফোনের জন্যও কিছু টাকা রাখা উচিত। এছাড়া, বাজেটের মধ্যে থাকা ফোনের ফিচার তুলনা করে দেখা গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনি সর্বোচ্চ মূল্য পান।

বাজেট নির্ধারণের সময় আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হলো দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। সস্তা ফোন কিনে স্বল্পমেয়াদে টাকা বাঁচানো যেতে পারে, কিন্তু এগুলো দ্রুত পুরনো হয়ে যেতে পারে বা পারফরম্যান্সে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই একটু বেশি বিনিয়োগ করে এমন ফোন কেনা ভালো যেটি ২-৩ বছর ভালো পারফরম্যান্স দেবে। এছাড়া, বাজেটের মধ্যে থাকা ফোনের রিভিউ পড়ে নেওয়া উচিত। অনলাইনে ইউটিউব বা টেক ব্লগে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানা যায়, যা আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। বাজেটের মধ্যে সেরা ফোনটি বেছে নিতে বাজারের প্রতিযোগিতার সুযোগ নিন, কারণ অনেক ব্র্যান্ড একই দামে ভালো ফিচার দেয়। সবশেষে, ফোন কেনার সময় ছাড় বা অফারের দিকেও নজর রাখুন, যা আপনার বাজেটের মধ্যে ভালো ফোন কিনতে সহায়ক হবে।

প্রসেসর এবং পারফরম্যান্স 

স্মার্ট ফোনের প্রসেসর হলো এর মূল শক্তি, যাকে ফোনের মস্তিষ্ক বলা যায়। একটি ভালো প্রসেসর ফোনের গতি, মাল্টিটাস্কিং ক্ষমতা এবং সামগ্রিক পারফরম্যান্স নির্ধারণ করে। বাজারে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন, মিডিয়াটেক, অ্যাপল বায়োনিক এবং স্যামসাং এক্সিনোসের মতো প্রসেসর পাওয়া যায়। আপনি যদি গেমিং বা ভিডিও এডিটিংয়ের মতো ভারী কাজ করতে চান, তাহলে স্ন্যাপড্রাগন ৮ সিরিজ বা অ্যাপলের A-সিরিজ প্রসেসরের ফোন বেছে নিন। মধ্যম বাজেটের ফোনের জন্য মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি বা স্ন্যাপড্রাগন ৭ সিরিজও ভালো পারফরম্যান্স দেয়। প্রসেসর বাছাইয়ের সময় এর কোর সংখ্যা, ক্লক স্পিড এবং জিপিইউ (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) এর দিকে নজর দিন। এছাড়া, প্রসেসরের সাথে ফোনের অপ্টিমাইজেশনও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের ফোন কম কোর দিয়েও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেয় কারণ তাদের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের সমন্বয় খুব ভালো।

প্রসেসর ছাড়াও ফোনের পারফরম্যান্স নির্ভর করে এর র‍্যাম এবং সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশনের উপর। ৬ জিবি বা তার বেশি র‍্যাম বর্তমানে বেশিরভাগ অ্যাপের জন্য যথেষ্ট। তবে ভারী গেম বা অ্যাপ ব্যবহারের জন্য ৮ জিবি বা ১২ জিবি র‍্যাম ভালো। পারফরম্যান্স পরীক্ষা করতে বেঞ্চমার্ক স্কোর যেমন AnTuTu বা Geekbench দেখতে পারেন। এছাড়া, ফোনের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘক্ষণ গেমিং বা ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের সময় ফোন গরম হয়ে গেলে পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে। তাই কুলিং সিস্টেম সম্পর্কে জানুন। বাজেট ফোনেও এখন ভালো প্রসেসর পাওয়া যায়, তবে ব্র্যান্ডের অপ্টিমাইজেশনের উপর নির্ভর করে ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। অতএব, ফোন কেনার আগে প্রসেসরের রিভিউ পড়ে নিন এবং আপনার চাহিদা অনুযায়ী সঠিকটি বেছে নিন।

ডিসপ্লে এবং স্ক্রিন কোয়ালিটি 

স্মার্ট ফোনের ডিসপ্লে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার একটি বড় অংশ নির্ধারণ করে। একটি ভালো ডিসপ্লে ভিডিও দেখা, গেম খেলা এবং এমনকি টেক্সট পড়ার অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে। বাজারে এলসিডি, অ্যামোলেড এবং ওলেড ডিসপ্লে পাওয়া যায়। অ্যামোলেড এবং ওলেড ডিসপ্লে গভীর কালো রঙ এবং উজ্জ্বল কনট্রাস্ট দেয়, যা ভিডিও এবং গেমিংয়ের জন্য আদর্শ। এলসিডি ডিসপ্লে সাধারণত বাজেট ফোনে পাওয়া যায় এবং এগুলোর রঙের গুণগত মান কিছুটা কম হতে পারে। ডিসপ্লের রেজোলিউশনও গুরুত্বপূর্ণ; ফুল এইচডি (১৯২০x১০৮০) বা তার বেশি রেজোলিউশন ভালো ছবির গুণগত মান দেয়। এছাড়া, রিফ্রেশ রেট (৬০Hz, ৯০Hz, বা ১২০Hz) স্ক্রিনের মসৃণতা নির্ধারণ করে। উচ্চ রিফ্রেশ রেট গেমিং এবং স্ক্রলিংয়ের জন্য ভালো।

ডিসপ্লে বাছাইয়ের সময় স্ক্রিনের আকারও বিবেচনা করুন। ৬.৫ ইঞ্চি বা তার বেশি স্ক্রিন ভিডিও দেখার জন্য ভালো, কিন্তু এক হাতে ব্যবহারের জন্য ছোট স্ক্রিন বেশি আরামদায়ক। এছাড়া, স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা (নিটস) গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বাইরে ব্যবহারের জন্য। ৫০০ নিটস বা তার বেশি উজ্জ্বলতা সূর্যের আলোতেও ভালো দৃশ্যমানতা দেয়। ডিসপ্লের সুরক্ষাও মাথায় রাখুন; গরিলা গ্লাস বা অন্যান্য টেম্পার্ড গ্লাস স্ক্রিনকে স্ক্র্যাচ এবং ভাঙন থেকে রক্ষা করে। এইচডিআর সমর্থন থাকলে ভিডিওর গুণগত মান আরও ভালো হয়। বাজেট ফোনে অ্যামোলেড ডিসপ্লে এখন সাধারণ হয়ে উঠেছে, তাই আপনার চাহিদা এবং বাজেটের সাথে মিলিয়ে ডিসপ্লে বেছে নিন। রিভিউ পড়ে বা দোকানে ফোনের ডিসপ্লে পরীক্ষা করে দেখা ভালো।

ক্যামেরার গুণগত মান 

স্মার্ট ফোনের ক্যামেরা এখন অনেকের কাছে কেনার প্রধান কারণ। একটি ভালো ক্যামেরা দিয়ে আপনি দৈনন্দিন মুহূর্ত থেকে শুরু করে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি পর্যন্ত করতে পারেন। ক্যামেরা বাছাইয়ের সময় মেগাপিক্সেলের পাশাপাশি সেন্সরের গুণগত মান, অ্যাপারচার (f/1.8 বা কম ভালো), এবং সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশন দেখুন। বেশি মেগাপিক্সেল মানেই ভালো ছবি নয়; গুগল পিক্সেলের মতো ফোন কম মেগাপিক্সেল দিয়েও দুর্দান্ত ছবি তুলতে পারে। মাল্টি-লেন্স সিস্টেম যেমন আল্ট্রা-ওয়াইড, টেলিফটো বা ম্যাক্রো লেন্স বহুমুখী ফটোগ্রাফির সুযোগ দেয়। এছাড়া, নাইট মোড এবং এআই-ভিত্তিক ফিচার কম আলোতে ছবির গুণগত মান বাড়ায়। ভিডিও রেকর্ডিংয়ের জন্য ৪কে রেজোলিউশন এবং স্টেবিলাইজেশন (OIS বা EIS) গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যামেরার পারফরম্যান্স ফোনের প্রসেসর এবং সফটওয়্যারের উপরও নির্ভর করে। অ্যাপল, গুগল, এবং স্যামসাংয়ের ফোন তাদের ক্যামেরা অপ্টিমাইজেশনের জন্য বিখ্যাত। বাজেট ফোনে এখন ৪৮ এমপি বা ৬৪ এমপি ক্যামেরা সাধারণ, তবে সেকেন্ডারি লেন্সের গুণগত মান কম হতে পারে। ক্যামেরা পরীক্ষা করতে ফোনের স্যাম্পল ছবি বা রিভিউ দেখুন। সেলফি ক্যামেরার দিকেও নজর দিন, বিশেষ করে যদি আপনি ভিডিও কল বা সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ফোন ব্যবহার করেন। ফ্রন্ট ক্যামেরায় ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল ফিচার বা নাইট মোড থাকলে আরও ভালো। ক্যামেরার বৈচিত্র্য এবং গুণগত মান আপনার ফটোগ্রাফির চাহিদার সাথে মিলিয়ে বেছে নিন। দোকানে গিয়ে ক্যামেরা পরীক্ষা করে দেখা সবচেয়ে ভালো উপায়।

ব্যাটারি লাইফ এবং চার্জিং 

স্মার্ট ফোনের ব্যাটারি লাইফ ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো ব্যাটারি ফোনটিকে দিনভর চালু রাখে, বিশেষ করে যারা বেশি ভ্রমণ করেন বা ফোন বেশি ব্যবহার করেন। ব্যাটারির ক্ষমতা মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ারে (mAh) পরিমাপ করা হয়। সাধারণত ৪০০০ mAh বা তার বেশি ক্ষমতার ব্যাটারি ভালো। তবে ব্যাটারি লাইফ শুধু ক্ষমতার উপর নির্ভর করে না; প্রসেসরের দক্ষতা, স্ক্রিনের রিফ্রেশ রেট, এবং সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশনও এতে ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের ফোন কম ক্ষমতার ব্যাটারি দিয়েও ভালো লাইফ দেয়। ব্যাটারি লাইফ পরীক্ষা করতে রিভিউ বা ব্যবহারকারীর মতামত দেখুন। 

ফাস্ট চার্জিং বর্তমানে ফোনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। ২৫W, ৬৫W বা তার বেশি গতির ফাস্ট চার্জিং ফোন দ্রুত চার্জ হয়, যা সময় বাঁচায়। তবে ফাস্ট চার্জিংয়ের জন্য ফোনের সাথে চার্জার দেওয়া হয় কিনা তা পরীক্ষা করুন, কারণ কিছু ব্র্যান্ড এখন চার্জার আলাদা বিক্রি করে। ওয়্যারলেস চার্জিংও কিছু ফোনে পাওয়া যায়, যা সুবিধাজনক কিন্তু ধীর। ব্যাটারির দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে, অতিরিক্ত গরম এড়িয়ে চলুন এবং ২০%-৮০% চার্জের মধ্যে রাখুন। ব্যাটারি লাইফ এবং চার্জিং স্পিডের ভারসাম্য আপনার দৈনন্দিন চাহিদার উপর নির্ভর করে। যদি আপনি সারাদিন ফোন ব্যবহার করেন, তাহলে বড় ব্যাটারি এবং ফাস্ট চার্জিংয়ের ফোন বেছে নিন।

স্টোরেজ এবং র‍্যাম 

স্মার্ট ফোনের স্টোরেজ এবং র‍্যাম ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। স্টোরেজ ফোনের অভ্যন্তরীণ মেমরিতে ফাইল, অ্যাপ, ছবি এবং ভিডিও সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ৬৪ জিবি, ১২৮ জিবি, ২৫৬ জিবি বা তার বেশি স্টোরেজ পাওয়া যায়। যদি আপনি বেশি ছবি, ভিডিও বা অ্যাপ ব্যবহার করেন, তাহলে কমপক্ষে ১২৮ জিবি স্টোরেজ বেছে নিন। কিছু ফোন মাইক্রোএসডি কার্ডের মাধ্যমে স্টোরেজ বাড়ানোর সুবিধা দেয়, যা বাজেট ফোনে বেশি দেখা যায়। তবে হাই-এন্ড ফোন সাধারণত এই ফিচার দেয় না। স্টোরেজ বাছাইয়ের সময় মনে রাখবেন, অপারেটিং সিস্টেম এবং প্রি-ইনস্টলড অ্যাপ কিছু জায়গা নিয়ে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ৬৪ জিবি ফোনে মাত্র ৫০ জিবি ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। তাই আপনার চাহিদা অনুযায়ী স্টোরেজ বেছে নিন।

র‍্যাম ফোনের মাল্টিটাস্কিং এবং গতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ৪ জিবি র‍্যাম বেসিক কাজের জন্য যথেষ্ট, তবে ৬ জিবি বা ৮ জিবি র‍্যাম মসৃণ অভিজ্ঞতা দেয়। গেমিং বা ভারী অ্যাপের জন্য ১২ জিবি বা তার বেশি র‍্যাম ভালো। র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের উপরও নির্ভর করে; অ্যাপলের ফোন কম র‍্যাম দিয়েও ভালো পারফর্ম করে। বাজেট ফোনে এখন ৬ জিবি র‍্যাম সাধারণ, তবে স্টোরেজ এবং র‍্যামের সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ৬৪ জিবি স্টোরেজ এবং ৪ জিবি র‍্যামের ফোন হালকা ব্যবহারের জন্য ঠিক আছে, কিন্তু ভারী কাজের জন্য ১২৮ জিবি এবং ৮ জিবি র‍্যাম ভালো। ফোন কেনার আগে স্টোরেজ এবং র‍্যামের বিষয়ে রিভিউ পড়ুন এবং আপনার ব্যবহারের ধরন বিবেচনা করুন।

অপারেটিং সিস্টেম এবং ইউজার ইন্টারফেস

 স্মার্ট ফোনের অপারেটিং সিস্টেম (OS) এর ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এবং ফোনের কার্যকারিতার উপর বড় প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে দুটি প্রধান অপারেটিং সিস্টেম আছে: অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস। অ্যান্ড্রয়েড গুগলের তৈরি এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন স্যামসাং, শাওমি, ওপ্পো এটি ব্যবহার করে। এটি কাস্টমাইজেশনের স্বাধীনতা দেয় এবং বিভিন্ন দামের ফোনে পাওয়া যায়। আইওএস অ্যাপলের তৈরি এবং শুধু আইফোনে পাওয়া যায়। আইওস মসৃণ, নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদী আপডেট দেয়। আপনার পছন্দের উপর নির্ভর করে কোনটি বেছে নেবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে থাকেন (ম্যাক, আইপ্যাড), আইওএস ভালো। কিন্তু বাজেট ফোনের জন্য অ্যান্ড্রয়েডই বেশি সাশ্রয়ী।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্র্যান্ডের নিজস্ব ইউজার ইন্টারফেস (UI) থাকে, যেমন স্যামসাংয়ের One UI, শাওমির MIUI, বা ওপ্পোর ColorOS। এই UI ফোনের অভিজ্ঞতাকে বদলে দেয়। কিছু UI ফিচার-সমৃদ্ধ কিন্তু ভারী হতে পারে, যা পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে। স্টক অ্যান্ড্রয়েড (যেমন গুগল পিক্সেল) মসৃণ এবং দ্রুত আপডেট পায়। ফোন কেনার আগে UI সম্পর্কে জানুন এবং সম্ভব হলে দোকানে পরীক্ষা করে দেখুন। এছাড়া, সফটওয়্যার আপডেট নীতি দেখুন। অ্যাপল ৫-৬ বছর আপডেট দেয়, কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এটি ২-৩ বছর হতে পারে। একটি ভালো UI এবং দীর্ঘমেয়াদী আপডেট ফোনের আয়ু বাড়ায়। তাই আপনার পছন্দ এবং চাহিদা বিবেচনা করে OS এবং UI বেছে নিন।

নেটওয়ার্ক এবং কানেক্টিভিটি 

স্মার্ট ফোনের নেটওয়ার্ক এবং কানেক্টিভিটি বৈশিষ্ট্য যোগাযোগ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য অপরিহার্য। বর্তমানে ৫জি ফোন বাজারে প্রচলিত, যা দ্রুত ইন্টারনেট স্পিড দেয়। তবে আপনার এলাকায় ৫জি নেটওয়ার্ক না থাকলে ৪জি ফোনও যথেষ্ট। ফোন কেনার আগে এর নেটওয়ার্ক ব্যান্ড পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে যদি আপনি বিদেশে ব্যবহার করেন। ওয়াই-ফাই ৬ সমর্থন দ্রুত এবং স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ দেয়। ব্লুটুথ সংস্করণ (৫.০ বা তার বেশি) ইয়ারবাড বা স্মার্টওয়াচের সাথে সংযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) কন্ট্যাক্টলেস পেমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা অনেক দেশে জনপ্রিয়।

কানেক্টিভিটির আরেকটি দিক হলো ডুয়াল সিম সুবিধা। অনেক ফোন ডুয়াল সিম সমর্থন করে, যা ব্যক্তিগত এবং অফিস নম্বর ব্যবহারের জন্য সুবিধাজনক। কিছু ফোন eSIM সমর্থন করে, যা ভবিষ্যৎ-ভিত্তিক। জিপিএস এবং অন্যান্য নেভিগেশন সিস্টেম (GLONASS, Galileo) ম্যাপ ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাজেট ফোনে সাধারণত ৫জি বা এনএফসি থাকে না, তাই আপনার চাহিদা বিবেচনা করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি প্রায়ই ভ্রমণ করেন, তাহলে গ্লোবাল ব্যান্ড এবং eSIM সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। কানেক্টিভিটি ফিচার ফোনের দামের সাথে সম্পর্কিত, তাই বাজেটের মধ্যে সেরা বিকল্পটি বেছে নিন। রিভিউ পড়ে বা দোকানে ফোনের নেটওয়ার্ক ফিচার পরীক্ষা করে দেখুন।

ব্র্যান্ডের নির্ভরযোগ্যতা এবং বিক্রয়োত্তর সেবা

 স্মার্ট ফোন কেনার সময় ব্র্যান্ডের নির্ভরযোগ্যতা এবং বিক্রয়োত্তর সেবা গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড মানসম্পন্ন পণ্য এবং ভালো গ্রাহক সেবা দেয়। অ্যাপল, স্যামসাং, গুগল, এবং শাওমির মতো ব্র্যান্ড তাদের গুণগত মানের জন্য পরিচিত। তবে নতুন বা কম পরিচিত ব্র্যান্ড কম দামে ভালো ফিচার দিতে পারে, কিন্তু তাদের সেবা নাও পাওয়া যেতে পারে। ফোন কেনার আগে ব্র্যান্ডের সার্ভিস সেন্টারের উপলব্ধতা পরীক্ষা করুন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপল এবং স্যামসাংয়ের সার্ভিস সেন্টার বাংলাদেশে অনেক জায়গায় আছে, কিন্তু কিছু চীনা ব্র্যান্ডের সীমিত সেবা থাকতে পারে। ব্র্যান্ডের ওয়ারেন্টি নীতিও দেখুন, সাধারণত ১ বছরের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়।

বিক্রয়োত্তর সেবা ফোনের দীর্ঘায়ুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফোন নষ্ট হলে বা আপডেট প্রয়োজন হলে সার্ভিস সেন্টারের সহায়তা লাগে। কিছু ব্র্যান্ড দ্রুত মেরামত বা প্রতিস্থাপন সেবা দেয়, আবার কিছু ব্র্যান্ডের সেবা ধীর হতে পারে। অনলাইন রিভিউ এবং ফোরামে ব্র্যান্ডের গ্রাহক সেবার মতামত পড়ুন। এছাড়া, ব্র্যান্ডের বাজারে সুনাম এবং দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতি বিবেচনা করুন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের ফোন বছরের পর বছর ভালো থাকে, কিন্তু কিছু সস্তা ব্র্যান্ডের ফোন দ্রুত সমস্যা দেখাতে পারে। তাই নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড এবং ভালো সেবা নিশ্চিত করুন।

ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি

 স্মার্ট ফোনের ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এবং ফোনের স্থায়িত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো ডিজাইন ফোনটিকে আকর্ষণীয় এবং ব্যবহারে আরামদায়ক করে। ফোনের উপকরণ যেমন গ্লাস, ধাতু বা প্লাস্টিক বিল্ড কোয়ালিটি নির্ধারণ করে। প্রিমিয়াম ফোনে গ্লাস বা ধাতু ব্যবহৃত হয়, যা টেকসই এবং সুন্দর। বাজেট ফোনে প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, যা হালকা কিন্তু কম টেকসই। ফোনের স্ক্রিন সুরক্ষা যেমন গরিলা গ্লাস বা স্যাফায়ার গ্লাস স্ক্র্যাচ এবং ভাঙন থেকে রক্ষা করে। এছাড়া, আইপি রেটিং (IP67 বা IP68) ফোনকে পানি এবং ধুলো থেকে রক্ষা করে। ডিজাইন বাছাইয়ের সময় ফোনের ওজন এবং পুরুত্বও বিবেচনা করুন।

ডিজাইনের আরেকটি দিক হলো এরগনমিক্স। বড় স্ক্রিনের ফোন দেখতে সুন্দর, কিন্তু এক হাতে ব্যবহার কঠিন হতে পারে। বেজেল-লেস ডিজাইন বা কার্ভড স্ক্রিন ফোনকে আধুনিক করে, কিন্তু দাম বাড়ায়। রঙ এবং ফিনিশও ডিজাইনের অংশ; কিছু ফোন গ্রেডিয়েন্ট বা ম্যাট ফিনিশ দেয়। বিল্ড কোয়ালিটি পরীক্ষা করতে ফোন হাতে নিয়ে দেখুন এবং রিভিউ পড়ুন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপল এবং স্যামসাংয়ের ফোন তাদের প্রিমিয়াম বিল্ডের জন্য বিখ্যাত। বাজেট ফোনে এখন গ্লাস ব্যাক পাওয়া যায়, তবে স্থায়িত্ব কম হতে পারে। আপনার পছন্দ এবং ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি বেছে নিন।

লেখক এর কথা স্মার্ট ফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত সম্পর্কে 

স্মার্ট ফোন কেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, এবং সঠিক ফোন বেছে নিতে আপনার চাহিদা, বাজেট এবং পছন্দ বিবেচনা করা জরুরি। বাজেট নির্ধারণ থেকে শুরু করে প্রসেসর, ডিসপ্লে, ক্যামেরা, ব্যাটারি, স্টোরেজ, অপারেটিং সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, ব্র্যান্ডের নির্ভরযোগ্যতা এবং ডিজাইন—প্রতিটি বিষয় ফোনের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে। একটি ভালো ফোন শুধু আপনার দৈনন্দিন কাজই সহজ করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে। তাই ফোন কেনার আগে রিভিউ পড়ুন, দোকানে পরীক্ষা করে দেখুন এবং আপনার চাহিদার সাথে মিলিয়ে বেছে নিন। বাজারে অসংখ্য বিকল্প থাকায় ধৈর্য ধরে গবেষণা করলে আপনি আপনার জন্য সেরা ফোনটি খুঁজে পাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইনফো লাগবের নীতিমালা জেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়। ;

comment url